কিভাবে অনলাইনে টিকিট কাটতে হয় অনেকেই জানেন না। অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম জানা থাকলে যাত্রা অনেক সহজ হয়। তাই এখানে টিকেট কাটতে কি কি লাগবে, কিভাবে অগ্রিম টিকেট কাটা যায়, বিকাশ না নগদের মাধ্যমে টিকেট ক্রয় সহ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম জানার আগে জানতে হবে টিকেট কাটতে কি কি তথ্যের দরকার হয়। বলে রাখা ভালো অনলাইনে টিকেট কাটার দুইটি নিয়ম রয়েছে। এই দুইটি সহজ পদ্ধতি ধাপে ধাপে দেখানো হয়েছে।
ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনলাইনে
অনালাইনে টিকেট কাটার জন্য দুইটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমটি সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এবং অপরটি মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে।
- প্রথমত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এবং
- ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
সারাংশঃ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য প্রথমে eticket.railway.gov.bd এই ওয়েবসাইট থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর সিট ও কোঁচ সিলেক্ট করতে হবে। বিকাশ কিংবা নগদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমান পেমেন্ট সম্পন্ন করলে অনলাইনে টিকেট ক্রয় সম্পন্ন হয়ে যাবে।
এই পুরো বিষয়টি ধাপে ধাপে দেখানো আছে। আপনার হাতের মোবাইল ফোনটি দিয়েই মাত্র ২ মিনিটে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটতে পারবে যে কেও। তার আগে জানতে হবে ট্রেনের টিকেট কাটতে কি কি ডকুমেন্টস দরকার হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা NID কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধনের তথ্য।
- একটি সচল মোবাইল নম্বর এবং
- একটি ইমেইল এড্রেস যদি থাকে।
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম
ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে এখন ঘরে বসেই ট্রেনের টিকিট কেনার সুযোগ আছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সহজ, দ্রুত ও স্বচ্ছ অনলাইন ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু করেছে। যার ফলে যাত্রীরা সহজেই টিকিট বুকিং, পেমেন্ট ও ডাউনলোড করতে পারেন।
ধাপ-১ঃ সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
প্রথমে আপনার মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের গুগল ক্রোম (Chrome) কিংবা অন্য যেকোনো ব্রাউজার ওপেন করতে হবে। তারপর টাইপ করুন eticket অথবা সরাসরি eticket.railway.gov.bd এই লিঙ্কে প্রবেশ করতে হবে। তখন নিচের ছবির মত একটি পেজ চলে আসবে।

এরপর I Agree বাটনে ক্লিক করতে হবে। একইসাথে ওপরের একটি মেনু বার দেখা যাচ্ছে এখানে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-২ঃ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন
এই ধাপে একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। তার জন্য প্রথমে উপরের মেনু বারে ক্লিক করতে হবে। এখানে ক্লিক করলে বেশ কিছু তথ্য দেখাবে। যেমনঃ
- Home
- Login
- Register
- Train Information
- Contact Us

এখান থেকে Register বাটনে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর বেশ কিছু তথ্য পুরন করতে বলবে। অবশ্যই সঠিক ও নির্ভুল তথ্য প্রদান করতে হবে।
ধাপ-৩ঃ NID কার্ড ভেরিফিকেশন করুন
এই ধাপে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে হবে। যেমনঃ
- নাম
- মোবাইল নাম্বার
- NID কার্ড নাম্বার এবং
- জন্ম তারিখ

প্রথমে ব্যক্তির নাম এবং একটি সচল মোবাইল নাম্বার প্রবেশ করাতে হবে। এই মোবাইল নম্বরটি যে কোন অপারেটর হতে পারে। তবে অবশ্যই বাংলালিংক, গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল, টেলিটক কিংবা বাংলাদেশে সাপোর্ট করে এমন সিম হতে হবে।
এরপর ১০ ডিজিটের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর প্রদান করতে হবে। আপনার আইডি কার্ড যদি ১৭ কিংবা ১৩ সংখ্যার হয়ে থাকে তবে জেনে নিন যেভাবে ১৭ সংখ্যার আইডি কার্ড নম্বর ১০ সংখ্যায় রূপান্তর করবেন।
NID তথ্য পূরণ করা হয়ে গেলে আপনার জন্ম সালের তথ্য প্রদান করুন এবং একটি ক্যাপচা কোড পূরণ করুন। নির্দিষ্ট ক্যাপচা পূরণ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আপনার মোবাইল ফোনে ৬ ডিজিট এর একটি ভেরিফিকেশন কোড যাবে।
এই কোড প্রবেশ করালে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়ে যাবে। এবার শুধু লগইন করে টিকেট কাটার পালা।
ধাপ-৪ঃ অ্যাকাউন্ট লগইন করুন
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়ে গেলে একটি পাসওয়ার্ড সেট করে নিতে হবে। উক্ত মোবাইল নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে পুনরায় উপরের মেনু বাটন থেকে লগইন করে নিতে হবে। পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে Forgot Password ? বাটনে ক্লিক করে রিসেট করা যাবে।
লগইন হয়ে গেলে সর্বপ্রথম ইমেজের মত নতুন একটি পেজ চলে আসবে। যেখানে বেশ কিছু অপশন দেখা যাবে। যেমনঃ
- From
- To
- Date of Journey
- Choose Class
- Search Train
From: এখানে From বলতে যে স্টেশন হতে যাত্রা শুরু করবেন শেষ স্টেশনের নাম দিতে হবে। যেমন কেউ যদি ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে তবে Dha লিখলেই ঢাকা কমলাপুর স্টেশনের নাম চলে আসবে। তখন ক্লিক করেই সিলেট করা যাবে।
To: এখানে To বলতে যে স্টেশন পর্যন্ত টিকেট ক্রয় করবেন সেই স্টেশনের নাম লিখতে হবে। যেমন ধরুন আপনি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ স্টেশন পর্যন্ত যাত্রা করবেন। এক্ষেত্রে FROM এ ঢাকা এবং TO তে ময়মনসিংহ স্টেশনের নাম প্রবেশ করাবেন।
Date of Journey: এখানে যাত্রীগণ যে তারিখে ভ্রমণ করবে সেই তারিখের টিকেট সিলেট করতে পারবে। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো বাংলাদেশ রেলওয়ে অগ্রিম টিকেট যাত্রার চার দিন আগে থেকে ক্রয় করা যায়। অর্থাৎ আজকে যদি ১ তারিখ হয় আপনি চার তারিখের টিকেট ক্রয় করতে পারবেন।
Choose Class: এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বাংলাদেশের রেলওয়েতে বেশ কিছু ক্লাসের টিকিট রয়েছে। সেটের ধরন অনুসারে, এই টিকেটের মূল্য পরিবর্তিত হয়। বাংলাদেশ রেলওয়েতে বর্তমানে সুলভ, শুভন, শোভন চেয়ার, ফার্স্ট ক্লাস সিট, ফার্স্ট ক্লাস চেয়ার, স্নিগ্ধা, এসি এবং কেবিন সিট পাওয়া যায়।
এই সব কিছু সিলেট করা হয়ে গেলে Search Train বাটনে ক্লিক করলে যাত্রা স্টেশন থেকে গন্তব্য স্টেশন পর্যন্ত যতগুলো ট্রেন আছে সবগুলো ট্রেনের তথ্য দেখা যাবে।
ধাপ-৫ঃ সিট বুকিং ও পেমেন্ট করুন
ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হচ্ছে সিট বুকিং এবং পেমেন্ট। এই ধাপে গন্তব্য এবং যাত্রা স্টেশনের মধ্যে যতগুলো ট্রেন আছে সবগুলো ট্রেনের তথ্য দেখাবে। একই সাথে কোন ট্রেনের কোন সিটের কত টাকা ভাড়া সব দেখা যাবে।

এখন নির্দিষ্ট সিট সিলেক্ট করে Book Now বাটনে ক্লিক করে টিকিট বুক করা যাবে। অর্থাৎ কোন বগিতে কত নম্বর সিট সিলেক্ট করতে চান এবং কতটি সেট সিলেক্ট করতে চান সে অনুসারে সিট সিলেকশন করতে হবে। বলে রাখা ভালো একটি একাউন্টে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট ক্রয় করা যায়।

এখানে দুই রঙের সিট দেখা যায়। হলুদ রঙের সিট গুলো ইতিমধ্যে বুক হয়ে গেছে অর্থাৎ এই সেটগুলো আপনি পুনরায় সিলেক্ট করতে পারবেন না। তবে এখানে সাধারণের সেটগুলো এখনো বিক্রি হয়নি। এখান থেকে সিট সিলেক্ট করে Continue Purchase বাটনে ক্লিক করে সিট সিলেকশন সম্পূর্ণ করতে হবে।
এরপর আপনার মোবাইলের নম্বরে একটি চার সংখ্যার OTP Code (One Time Password) যাবে। উক্ত কোডটি প্রবেশ করিয়ে সাবমিট করলেই পরবর্তী পেমেন্ট ধাপে নিয়ে যাবে।
ধাপ-৬ঃ অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটুন
নির্ধারিত পরিমান টিকেট মূল্য বিকাশ নগদ কিংবা রকেটের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও আপনি চাইলে কার্ড কিংবা ব্যাংকের মাধ্যমেও পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারবেন। পেমেন্ট সম্পন্ন করতে নিচের চিত্রটি খেয়াল করুন।

বিকাশ, নগদ কিংবা রকেটের ক্ষেত্রে ১১ ডিজিটের মোবাইল নম্বরটি প্রবেশ করাতে হবে। তারপর উক্ত নম্বরে ছয় ডিজিট এর একটি ভেরিফিকেশন কোড যাবে সেটি প্রবেশ করাতে হবে। এবং সর্বশেষ পিন নম্বর প্রবেশ করিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে। এরপর Print Now বাটনে ক্লিক করে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
এতক্ষণ ওয়েব সাইটের মাধ্যমে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারলাম। এবার আমরা জানবো কিভাবে মোবাইলের অ্যাপ এর মাধ্যমে সহজেই ঘরে বসে ট্রেনের টিকেট ক্রয় করা যায়।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম অনলাইনে
ব্যবহারকারীর হাতে থাকা স্মার্টফোনটি দিয়ে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এর মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট অনলাইনে কাটা সম্ভব। তার জন্য সর্বপ্রথম মোবাইলের গুগল প্লে স্টোরে প্রবেশ করতে হবে।
এখন আমাদের দেখানো সহজ পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম জেনে অনলাইনে মাত্র ২ মিনিটে টিকেট কাটা সম্ভব।
১। প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড
প্রথমে গুগল প্লে স্টোরে প্রবেশ করে Rail Seba লিখে সার্চ করতে হবে। তারপর সর্বপ্রথম যে অ্যাপটি চলে আসবে এটি ডাউনলোড এবং ইন্সটল করে নিতে হবে।

তারপর আগের দেখানো নিয়ম অনুসরণ করে পুনরায় জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য, একটি সচল মোবাইল নাম্বার এবং জন্ম তারিখের তথ্য প্রদান করতে হবে।
২। রেজিস্ট্রেশন ও লগইন
প্রথমে নাম, মোবাইল নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর কিংবা জন্ম সনদের নম্বর, তারপর জন্ম তারিখের তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে একটি ক্যাপচা কোড পূরণ করতে হবে। ক্যাপচা পূরণ হয়ে গেলে আইডি কার্ড ভেরিফাই করতে হবে।
একটি পাসওয়ার্ড সেট করে নিতে হবে এবং প্রধানকে তো নম্বরে একটি ওটিপি আসবে যেটি দিয়ে মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে। তারপর উক্ত মোবাইল নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্ট লগইন করে নিতে হবে।
৩। সিলেকশন এবং বুকিং

সিলেট সিলেকশন সম্পন্ন হয়ে গেলে বিকাশ নগদ কিংবা রকেটের মাধ্যমে পেমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে টিকেট ডাউনলোড করা যাবে।
পরবর্তীতে এই টিকেট প্রিন্ট করার প্রয়োজন নেই। ডিজিটাল কপিটি মোবাইলে সংরক্ষণ করুন এবং চেকিং কালে উক্ত ডিজিটাল কপিটি টিটিই এর নিকট প্রদর্শন করুন এবং স্বাচ্ছন্দেহে ভ্রমন করুন।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম অনলাইনে ২০২৫
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য প্রথমে eticket.railway.gov.bd এই ওয়েবসাইট থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর সিট সিলেক্ট করে বিকাশ কিংবা নগদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমান পেমেন্ট সম্পন্ন করলে অনলাইনে টিকেট কাটা সম্পন্ন হয়ে যাবে।
ট্রেনের টিকেট কাটার অ্যাপস ২০২৫
২০২৫ সালের অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার নিয়ম অনুসারে বাংলাদেশের একমাত্র রেলওয়ে টিকিট কাটার অ্যাপস হচ্ছে রেল সেবা (Rail Seba)